প্রোটিন জাতীয় খাবারের ১৫ টি উপকারিতা যা আপনার জানা উচিত

প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আপনি কি প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন? যদি না জেনে থাকেন ও জানতে আগ্রহী হন, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান প্রোটিন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা
এছাড়াও প্রোটিন জাতীয় খাবার কি কি ও আপনার প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণে প্রোটিন প্রয়োজন এ সম্পর্কেও আলোচনা করবো।

ভূমিকা

খাদ্য ও পুষ্টির অন্যতম প্রধান তিনটি উপাদান হলো: কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, প্রোটিন বা আমিষ ও ফ্যাট বা লিপিড। এগুলো কে ম্যাক্রো উপাদান বলে। আমাদের দৈনন্দিন ক্যালরির প্রায় বেশিরভাগ উৎস আসে এই ম্যাক্রো উপাদান থেকে। এই পু্ষ্টি উপাদানগুলো আমাদের সবচেয়ে বেশি পরিমাণে প্রয়োজন হয়। এগুলো দেহ নিজে থেকে তৈরি করতে পারে না। 

প্রোটিন বা আমিষ শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি পুষ্টি উপাদান। আমাদের দেহের প্রতিটি কোষে প্রোটিন থাকে। প্রোটিন আমাদের মাংসপেশী, হাড় ও টিস্যুগুলো সুস্থ ও সংরক্ষণ রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রোটিন কত প্রকার ও কি কি

মানবদেহে প্রধানত ৭ প্রকার প্রোটিন থাকে। প্রতিটি প্রোটিন ই দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও দেহে তাদের আলাদা আলাদা ভূমিকা রয়েছে। প্রধান ৭ টি প্রোটিনের নাম দেওয়া হলো:
  • Antibodies.
  • Enzymes.
  • Contractile proteins.
  • Transport proteins.
  • Hormones.
  • Structural proteins.
  • Storage proteins.

প্রোটিন এর কাজ কি

প্রোটিন জাতীয় খাবার দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো এসিড সরবরাহ করে। আমরা যখন প্রোটিন জাতীয় খাবার খাই, তখন এটি ভেঙ্গে অ্যামিনো এসিডে রুপান্তর হয় এবং শরীরে কাজে লাগে। অ্যামিনো এসিড প্রোটিন তৈরিতে, হরমোন উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সুস্থ থাকা ও শরীর সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রায় ২০ টি অ্যামিনো এসিড প্রয়োজন হয়, তার মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো এসিড হলো ৯ টি। 
এই অ্যামিনো এসিড গুলো দেহ নিজে থেকে তৈরি করতে পারে না। অ্যামিনো এসিড মাংসপেশী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। প্রোটিন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, জৈব রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। তাই আমাদের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার থাকা উচিত।

প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা

প্রোটিন জাতীয় খাবারের অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা গুলো দেওয়া হলো:

দেহের মাংসপেশী ও শক্তি বৃদ্ধিতে- পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে দেহের মাংসপেশী বৃদ্ধি হয়। এছাড়াও প্রোটিন ক্ষতিগ্রস্থ টিস্যুগুলো সারিয়ে তুলতে ও মাংসপেশী ধরে রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, প্রোটিন জাতীয় খাবার দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করেন, তাদের অবশ্যই প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়াও যারা মাসেল বাড়াতে জিমে Weightlifting বা ভার উত্তোলন ব্যয়াম করেন, তাদের জন্যও প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া আবশ্যক।
ক্ষুধা লাগার মাত্রা কমাতে- প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে দেহে Ghrelin নামক হরমোন এর মাত্রা কমে যায়। Ghrelin হরমোন এর কারণেই আমাদের ক্ষুধা লাগে। এছাড়া প্রোটিন Peptide YY হরমোন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যার কারণে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভব হয়।

কম ক্যালরি গ্রহণ করতে- কম ক্যালরি গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা লক্ষণীয়। অন্যান্য খাবারের তুলনায় প্রোটিন জাতীয় খাবার খুব কম পরিমাণে খেলেই আমাদের পেট ভরে যায়। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কম খাবার গ্রহণ করার কারণে ক্যালরির চাহিদা ও কমে আসে। যারা ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত হবে।

মেটাবলিজম বাড়াতে ও চর্বি কমাতে- প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে দেহের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। মেটাবলিজম হলো কোন খাবারকে শক্তি বা ক্যালরি তে রুপান্তর করার প্রক্রিয়া। যাদের দেহে মেটাবলিজম প্রক্রিয়া ধীরে সম্পন্ন হয়, অধিকাংশ সময় তারা স্থূলতার সমস্যায় ভোগে। প্রোটিন জাতীয় খাবার দেহের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে, যা পরোক্ষভাবে চর্বি কমাতে ও সহায়ক।

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে- প্রোটিন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক এগুলো রোগ হয়। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে এবং এ সংশ্লিষ্ট রোগব্যাধি ও হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। এছাড়া প্রোটিন রক্তে খারাপ কোলেস্টোরল এর পরিমাণ কমায়।

হাড়ের সুস্থতায়- পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করলে এটি হাড়জনিত বিভিন্ন সমস্যা, যেমন: হাড়ের ক্ষয়, হাড় দূর্বল হওয়া বা ভেঙ্গে যাওয়া সহ অনেক সমস্যা থেকে প্রতিরোধ করে। এছাড়াও অস্টিওপোরোসিস রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমাতেও প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা রয়েছে।

ওজন কমাতে- উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার দেহের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে ও ক্যালরির চাহিদা কমায়। যার কারণে স্বাভাবিকভাবে যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য এটি উপকারী হয়। যাদের ডায়েটে বা খাদ্য তালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে, তারা স্বয়ংক্রিয় ভাবেই ওজন কমাতে সক্ষম হন। এছাড়াও ওজন কমাতে গিয়ে যারা দৈনিক ক্যালরির পরিমাণ কমিয়ে আনেন, তাদের মাংসপেশী ধরে রাখতে ও প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার আকাঙক্ষা কমাতে- যারা সঠিক ডায়েট মেনে খাওয়া-দাওয়া করেন এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলেন, তাদের অনেকসময় ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খাওয়ার তীব্র আকাঙক্ষা জাগে। প্রোটিন এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার লোভ কমাতে সাহায্য করে এবং আমাদের দেহের জন্য উপকারী খাবার গুলো খাওয়ার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে- প্রোটিন আমাদের দেহে এন্টিবডি তৈরি করে। এন্টিবডি রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দের বিরুদ্ধে লড়াই করে ও সেগুলো ধ্বংস করে। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমাদের সুস্থ রাখে।

ক্ষত বা আঘাত সারিয়ে তুলতে- প্রোটিন দেহের মাংসপেশী গঠন করে। প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে যেকোন আঘাত বা ক্ষত শরীর খুব দ্রুত নিজে থেকে সারিয়ে তুলতে পারে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃ্দ্ধিতে- গবেষণায় দেখা গেছে, প্রোটিন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং মস্তিষ্ক তীক্ষ্ণ করে তোলে। মস্তিষ্কের কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অসংখ্য স্নায়ু কাজ করে। প্রোটিন এই স্নায়ু গুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করে।

হরমোন নিয়ন্ত্রণে- প্রোটিন জাতীয় খাবারে অ্যামিনো এসিড থাকে যা দেহের ভিতরে বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও তাদের উৎপাদন বাড়ায়।

ডায়েবিটিস নিয়ন্ত্রণে- ডায়েবিটিস নিয়ন্ত্রণেও প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা রয়েছে। প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে রক্তে সুগার এর পরিমাণ কমে যায় ও এটি ডায়েবিটিস নিয়ন্ত্রণ করে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করলে টাইপ-২ ডায়েবিটিস হওয়ার ঝুকি কমে যায়।

ত্বক ও চুল ভালো রাখে- আমাদের দেহের প্রতিটি কোষ বা টিস্যু গুলো প্রোটিন দিয়ে তৈরি। প্রোটিন টিস্যু গঠন করে। এই টিস্যুর অন্তর্গত হলো: চুল, ত্বক, নখ ইত্যাদি। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার চুল পড়া কমাতে ও ত্বক ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সুস্থ ও ফিট থাকতে- বয়স বৃদ্ধির সাথে প্রাকৃতিকভাবে আমাদের মাংসপেশী, হাড় এগুলো ক্ষয় হতে থাকে। প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে এই ক্ষতির হার অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

প্রোটিন জাতীয় খাবার কি কি

সাধারণত প্রাণীজ উৎসে প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা ও পরিমাণ বেশি থাকে। উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে এমন কিছু খাবারের নাম দেওয়া হলো:
প্রোটিন জাতীয় খাবার কি কি
ডিম- প্রোটিনের সবচেয়ে ভালো ও সহজলভ্য উৎস হলো ডিম। ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়া ডিমে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেমন: ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাট ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। ডিমের সাদা অংশে শুধুমাত্র প্রোটিন থাকে ও ডিমের কুসুমে প্রোটিন সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে।

মাছ- মাছ ও প্রোটিনের অন্যতম প্রধান উৎস। মাছে প্রোটিনের পাশাপাশি Omega-3 নামক ফ্যাটি এসিড থাকে। এই ফ্যাটি এসিড হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও হৃদরোগ ও টাইপ-২ ডায়েবিটিস এর ঝুঁকি কমায়। সামুদ্রিক মাছে Omega-3 ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ আরো বেশি থাকে। উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ কিছু সামুদ্রিক মাছের নাম হলো: টুনা, স্যালমন, সার্ডিন, চিংড়ি ইত্যাদি।

মুরগির মাংস- প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে মুরগির মাংস একটি অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে মুরগির বুকের মাংসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে প্রোটিন থাকে। এছাড়াও মুরগির মাংসে ভিটামিন বি ও জিংক পাওয়া যায়, যা দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গরুর মাংস- গরুর মাংস একটি উচ্চ সমৃদ্ধ প্রোটিনের উৎস। গরুর চর্বিহীন মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন বি, জিংক ও আইরন। কিন্তু এই ধরনের লাল মাংস খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া একদম ই উচিত নয়। বেশি পরিমাণে লাল মাংস খেলে স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত পরিমাণে লাল মাংস খেলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ডাউল- ডাউল আমাদের সকলের প্রিয় একটি খাবার। ডাউলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনের পাশাপাশি ফাইবার, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। যারা নিরামিষ জাতীয় ডায়েট মেনে খাওয়া-দাওয়া করেন, তাদের জন্য প্রোটিনের একটি ভালো উৎস হতে পারে মসুর ডাল। এছাড়াও ছোলা, মটরশুটি ও অন্যান্য ডালেও প্রোটিন থাকে।

দুধ- আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পুষ্টি উপাদান দুধের মধ্যে রয়েছে। দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম থাকে।

পনির- পনিরে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন থাকে। পনিরে প্রোটিন সহ ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-১২ থাকে। পনিরে ফ্যাটের পরিমাণ কম হওয়ায় এটি সহজেই খাদ্যতালিকায় যোগ করা যায়।

দই- দই প্রোটিন জাতীয় খাবারের উৎস। দই তে থাকে Probiotic যা পাকস্থলীর হজমশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়াও দই এ ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম ও জিংক থাকে।

বাদাম- বাদাম একটি অন্যতম উদ্ভিজ প্রোটিনের উৎস। বাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ফাইবার সহ অনেক উপাদান থাকে। বিভিন্ন ধরনের বাদাম, যেমন: কাঠ বাদাম, চিনা বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম ও আখরোট প্রোটিন এর ভালো উৎস হিসেবে পরিচিত।

কুমড়োর বিচি- কুমড়োর বিচি ও প্রোটিনের উৎস। কুমড়ো তে প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস থাকে।

প্রোটিন পাউডার- প্রোটিন পাউডার একধরনের প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট। যারা খাবারের মাধ্যমে তাদের প্রতিদিনের প্রোটিন চাহিদা পূরণ করতে পারেন না, তাদের জন্য প্রোটিন পাউডার বা সাপ্লিমেন্ট উপকারী হতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, প্রোটিন পাউডার এর দাম অনেক বেশি এবং সহজলভ্য নয়।

প্রোটিন জাতীয় সবজি

যারা প্রাণীজ উৎস থেকে প্রোটিন গ্রহণ করতে চান না বা নিরামিষ খাবার খাওয়াকে বেশি প্রাধান্য দেন, তারা উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন। প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ উভয় প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা রয়েছে। এমন কিছু উচ্চ প্রোটিন যুক্ত সবজির তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
  • মটরশুটি ও ছোলা।
  • শিমের বিচি।
  • পালং শাক।
  • ফুলকপি।
  • বাঁধাকপি।
  • ব্রকলি।
  • মিষ্টি আলু।
  • শতমূলী।
  • মাশরুম।
  • অ্যাভাকাডো।
  • ভুট্টা।
  • কুঁমড়োর বীজ।
  • চিয়া সিড।

প্রোটিন জাতীয় ফল

যদিও ফলে প্রোটিনের পরিমাণ খুবই সামান্য পরিমাণে থাকে, তারপরেও এমন কিছু ফল রয়েছে যেগুলোতে প্রোটিনের পরিমাণ অন্যান্য ফলে তুলনায় বেশি থাকে। এমন কিছু প্রোটিন জাতীয় ফল হলো:
প্রোটিন জাতীয় ফল
পেয়ারা- পেয়ারা খুব সুস্বাদু একটি ফল ও এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। পেয়ারা তে প্রোটিন সহ ফাইবার, এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি রয়েছে। এক কাপ পেয়ারা (১৬৫ গ্রাম) তে প্রায় ৪.২ গ্রাম প্রোটিন ও ৮.৯ গ্রাম ফাইবার থাকে।

কাঁঠাল- কাঁঠাল ও প্রোটিনের অন্যতম একটি উৎস। এতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। কাঁঠাল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হজমে সহায়ক ও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এক কাপ কাঁঠালে প্রায় ৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

অ্যাভোকাডো- এটি একটি বিদেশি ফল। এটি অনেক পুষ্টিকর ও উপকারী একটি ফল। অ্যাভোকাডো তে প্রোটিনের পাশাপাশি ফ্যাট, ফাইবার ও এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, উচ্চ রক্তচাপ ও খারাপ কোলেস্টোরল এর মাত্রা কমায়। একটি মাঝারী সাইজের অ্যাভোকাডো তে ৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

কিসমিস- আঙ্গুর ফল শুকিয়ে কিসমিস তৈরি করা হয়। আমরা সাধারণত মিষ্টান্নতে কিসমিস ব্যবহার করি। কিসমিসে প্রোটিন, ফাইবার, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এক আউন্স (২৮ গ্রাম) কিসমিসে ১ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

কলা- কলা খুব সহজলভ্য ও সুস্বাদু একটি ফল। কলা ও একটি প্রোটিন জাতীয় ফল। কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। একটি মাঝারী সাইজের কলা (১০০ গ্রাম) তে ১.১ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

কমলা লেবু- কমলা লেবু তে প্রোটিনের ‍উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়াও কমলা লেবু তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। একটি কমলা লেবুতে ১.৩ গ্রাম প্রোটিন ও ২.৮ গ্রাম ফাইবার থাকে।

ব্ল্যাকবেরি- ব্ল্যাকবেরি ও যে প্রোটিন সমৃদ্ধ ফল এটি সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। ব্ল্যাকবেরি তে প্রচুর ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে এবং এতে ক্যালরির পরিমাণ ও অনেক কম। ব্ল্যাকবেরি ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

প্রোটিন এর অভাবে কি রোগ হয়

আমাদের ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার থাকা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার না খেলে দেহে বিভিন্ন রোগ ও উপসর্গ দেখা দেয়। প্রোটিনের অভাবে কোয়াশিয়রকর নামক রোগ হয়। কোয়াশিয়রকর রোগ সাধারণত বাচ্চাদের মাঝে বেশি পরিমাণে দেখা যায়।

বিশেষ করে ৩-৫ বছর বয়সী শিশুদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের দেশগুলো কোয়াশিয়রকর রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি যেখানে খাদ্য দুর্ভিক্ষ রয়েছে। কোয়াশিয়রকর রোগের উপসর্গ গুলো হলো:
  • পায়ের গোড়ালি ও পাতায় পানি জমে ফুলে যায়।
  • Bloating এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। Bloating এর কারণে পেট স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বড় হয়ে যায় বা ফুলে যায়, পেটে ব্যথা অনুভব হয়। এছাড়াও এর কারণে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয় ও বিভিন্ন ধরনের শব্দ হয়।
  • দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
  • ক্ষুধামন্দা ও খাবারের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়।
  • ত্বকে এলার্জি দেখা দেয়। যার কারণে ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি ও ত্বক জ্বালাপোড়া করে।
  • চুল অনেক শুষ্ক ও ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়ে যায়।

কোন খাবারে কত প্রোটিন তালিকা

কোন খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ কতটুকু রয়েছে এটি জানার মাধ্যমে সহজেই উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা সম্ভব। নিচে প্রোটিন জাতীয় খাবারের নাম ও প্রোটিনের পরিমাণ দেওয়া হলো-
খাবার খাবারের পরিমাণ প্রোটিনের পরিমাণ
ডিম ১ টি ৬ গ্রাম
সামুদ্রিক মাছ ১০০ গ্রাম ২০ গ্রাম
মুরগির মাংস ১০০ গ্রাম ৩০ গ্রাম
মসুর ডাল ১০০ গ্রাম (রান্না করা) ৯ গ্রাম
দুধ এক কাপ বা ২৫০ মিলি ৯ গ্রাম
পনির এক কাপ বা ২২৬ গ্রাম ২৮ গ্রাম
দই ১০০ গ্রাম ১০ গ্রাম
কাঠ বাদাম এক আউন্স বা ২৮ গ্রাম ৬ গ্রাম
পেস্তা বাদাম এক আউন্স বা ২৮ গ্রাম ৫.৭৩ গ্রাম
কাজু বাদাম এক আউন্স বা ২৮ গ্রাম ৪.৩৪ গ্রাম
গরুর মাংস ১০০ গ্রাম ২৬ গ্রাম
খাসির মাংস ১০০ গ্রাম ২০ গ্রাম
পিনাট বাটার এক আউন্স বা ২৮ গ্রাম ৭ গ্রাম

কতটুকু প্রোটিন প্রয়োজন

পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা আমাদের সুস্থ থাকার জন্য অত্যাবশ্যক। শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিলে প্রোটিনের অভাবজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দেয়। Recommended Dietary Allowance এর নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতি কেজি ওজনের বিপরীতে ০.৮ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত।

উদাহরণস্বরুপ, কোনো ব্যক্তির ওজন যদি ৬৫ কেজি হয় তাহলে তার প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা হবে ৬৫*০.৮ গ্রাম= ৫২ গ্রাম। এছাড়াও প্রোটিনের পরিমাণ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন: বয়স, কতটা পরিশ্রমী, ফিটনেস লক্ষ্য, চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন কিনা ইত্যাদি। এছাড়াও আমরা সারাদিনে খাবারের মাধ্যমে যে ক্যালরি গ্রহণ করি তার ১০-৩৫% খাবার প্রোটিন থেকে গ্রহণ করা উচিত।
Source: Healthline, Medical News Today.

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আশা করছি আপনি প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা, প্রোটিন জাতীয় খাবার কি কি, প্রোটিন জাতীয় ফল, কতটুকু প্রোটিন প্রয়োজন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। যদি আপনার এই ধরনের বিশ্বস্ত ও তথ্যপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে ভালো লাগে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করতে পারেন। 

কারণ আমরা এই ধরনের আর্টিকেল নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি। আপনার কোন পরামর্শ বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার প্রিয়জন ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url