কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে কি হয় আপনি জানেন কি

প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আপনি কি জানেন কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে কি হয়? আমাদের দেহে কার্বোহাইড্রেট এর গুরুত্ব কতটা? যদি না জেনে থাকেন ও জানতে আগ্রহী হন, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে কি হয় ও কার্বোহাইড্রেট এর গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে কি হয়
এছাড়াও কার্বোহাইড্রেট এর উৎস, কার্বোহাইড্রেট এর শ্রেণীবিভাগ ও কতটুকু কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন এ সম্পর্কেও ধারণা দেব।

কনটেন্ট সূচিপত্র: কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে কি হয় বিস্তারিত জেনে নিন

ভূমিকা

খাদ্য ও পুষ্টির প্রধান তিনটি উপাদান হলো: প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট। কার্বোহাইড্রেট এর অপর নাম শর্করা বা শ্বেতসার। সুস্থ থাকার জন্য এই উপাদানগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। আমাদের দেহে প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদানের প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে কাজ করে কার্বোহাইড্রেট। এটি দেহ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে ও শক্তি প্রদান করতে সাহায্য করে।

সঠিক কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার ফাইবার, স্টার্চ সহ দেহে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দিতে পারে। অন্যদিকে কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে দেহে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

কার্বোহাইড্রেট এর কাজ কি

আমরা যখন কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার খাই, তখন পাচনতন্ত্র এটিকে ভেঙ্গে গ্লুকোজ এ রুপান্তর করে। গ্লুকোজ রক্তে মিশে দেহের কোষ বা টিস্যুতে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়। গ্লুকোজ থেকে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও এটি সঞ্চিত ফ্যাট হিসেবে লিভার ও মাংসপেশী তে জমা থাকে যা পরবর্তীতে দেহের কাজে লাগে। 
কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা নির্ধারণ করে। রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমাণ বেশি বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগ ও ডায়েবিটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

কার্বোহাইড্রেট এর বৈশিষ্ট্য

কার্বোহাইড্রেট এর কিছু সুনিদিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কার্বোহাইড্রেট এর বৈশিষ্ট্য গুলো হলো:
  • কার্বোহাইড্রেট কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দ্বারা গঠিত।
  • এতে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের অনুপাত হলো- ১ঃ২ঃ১ (ব্যতিক্রম র‌্যামনোজ)।
  • কার্বোহাইড্রেট দানাদার (চিনি), তন্তুময় (সেসুলোজ) ও পাউডার (গ্লুকোজ) হতে পারে।
  • কার্বোহাইড্রেট মিষ্টি (সুক্রোজ) বা স্বাদহীন (সেলুলোজ, গ্লাইকোজেন) হতে পারে।
  • এটি বেশি তাপে অঙ্গার বা কয়লায় এ পরিণত হয়।
  • বেশিরভাগ কার্বোহাইড্রেট পানিতে অদ্রবণীয়। তবে মনোস্যাকারাইড, ডাইস্যাকারাইড ও অলিগোস্যাকারাইড পানিতে দ্রবণীয়।
  • এটি এসিডের সাথে মিশে এস্টার গঠন করে।
  • এটি আলোতে সক্রিয় ও আলোকে সমাণুতা দেখায়।
  • কার্বোহাইড্রেট শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • এটি জীবদেহে সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে জমা থাকে।
  • কিছু কিছু কার্বোহাইড্রেট রক্ত জমাট বাধা বা হেপারিন রোগ প্রতিরোধ করে।

কার্বোহাইড্রেট এর সংকেত

দেহের সুস্থ থাকার জন্য যতগুলো পুষ্টি উপাদান রয়েছে তার মধ্যে যে উপাদানটি আমাদের সবচেয়ে বেশি পরিমাণে গ্রহণ করতে হয়, সেটি হলো কার্বোহাইড্রেট। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে জৈব অণু বা biomolecules থাকে কার্বোহাইড্রেটে। Carbohydrate শব্দটি Carbo ও hydrate শব্দের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে।
এখানে Carbo দ্বারা Carbon, ও hydrate দ্বারা H2O বা পানি কে বোঝানো হয়েছে। সুতরাং, কার্বোহাইড্রেট হচ্ছে এমন এক ধরনের যেীগ যার মধ্যে কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H) ও অক্সিজেন (O) থাকে। কার্বোহাইড্রেট এর স্থূল সংকেত হলো CnH2nOn. (মনোস্যাকারাইড)। এখানে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এর অনুপাত: 1:2:1.

কার্বোহাইড্রেট এর শ্রেণীবিভাগ

কার্বোহাইড্রেট এর প্রধান তিনটি উপাদান হলো চিনি, ফাইবার ও স্টার্চ। এই উপাদানের উপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেট কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো:
  • সরল শর্করা বা Simple Carbohydrate
  • জটিল শর্করা বা Complex Carbohydrate

সরল শর্করা বা Simple Carbohydrate

চিনি হলো সরল শর্করা বা Simple Carbohydrate. চিনি তে শুধুমাত্র একটি গ্লুকোজ অণু থাকে। এ জাতীয় খাবার খুব দ্রুত ভেঙ্গে গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু হঠাৎ করে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। সরল শর্করা যুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে খেলে হৃদরোগ স্থূলতা, টাইপ-২ ডায়েবিটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

এছাড়াও এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। সরল শর্করায় গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যেমন: ফাইবার, স্টার্চ, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে না। অন্যদিকে,খাবারের পরিমাণ অনুযায়ী ক্যালরির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই সরল শর্করা জাতীয় খাবার কম পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। সরল শর্করা জাতীয় খাবারে দুইভাবে চিনির উপস্থিতি দেখা যায়।প্রথমত, প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ফলমূল ও শাকসবজিতে।

দ্বিতীয়ত, কৃত্রিমভাবে যোগ করা হয় খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য। কৃত্রিম চিনি সাধারণত বাজারের প্যাকেটজাত বা ফাস্ট ফুড খাবারে থাকে। চিনি যুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো তে পুষ্টি গুণাগুণ থাকে না।

জটিল শর্করা বা Complex Carbohydrate

আমাদের জটিল শর্করা সমৃদ্ধ খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। কারণ এতে ডায়েটারি ফাইবার, স্টার্চ, ভিটামিন ও মিনারেল সহ অনেক পুষ্টি গুণাগুণ রয়েছে। জটিল শর্করায় ক্যালরির পরিমাণ ও কম থাকে। জটিল শর্করার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটি কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও স্থূলতা, হৃদরোগ ও টাইপ-২ ডায়েবিটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে না। সরল শর্করার তুলনায় জটিল শর্করা ভেঙ্গে গ্লুকোজে পরিণত হতে বেশি সময় লাগে, যার কারণে এটি ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমাণ বাড়ায়। জটিল শর্করার প্রধান দুটি উপাদান, ডায়েটারি ফাইবার ও স্টার্চ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
ডায়েটারি ফাইবার ও স্টার্চ
ফাইবার ও স্টার্চ জটিল শর্করা জাতীয় খাদ্যে পাওয়া যায়। বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ উৎস, যেমন: ফলমূল ও শাকসবজিতে ডায়েটারি ফাইবার ও স্টার্চ থাকে। ফাইবার ও স্টার্চ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমায় ও খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এ ধরনের খাবারের হজম গতি ধীরসম্পন্ন হওয়ায় দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ডায়েটারি ফাইবারের আরো কিছু উপকারিতা হলো: এটি পেটের পাচনতন্ত্র ভালো রাখে, নিয়মিত মলত্যাগ ও কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করতে অত্যন্ত কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। ফাইবার ও স্টার্চ যুক্ত খাবার কম ক্যালরি গ্রহণ করতে সহায়তা করে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম ফাইবার গ্রহণ করা উচিত।

প্রতিটি প্যাকেটজাত খাবার গুলোর পেছনে একটি পুষ্টি তালিকা বা Nutrition Label দেওয়া থাকে। আপনি সেটি পড়ে সহজেই জানতে পারবেন কোন উপাদান কতটুকু পরিমাণে রয়েছে।
ফাইবার ও স্টার্চ সমৃদ্ধ খাবার- ফাইবার ও স্টার্চ রয়েছে এমন কিছু খাবারের নাম দেওয়া হলো:
  • শাকসবজি- ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, ব্রকলি, ভুট্টা, মিষ্টি আলু।
  • ফলমূল- আপেল, কলা, স্ট্রবেরি ইত্যাদি।
  • বাদাম ও বিচি- কাঠ বাদাম, আখরোট, কুমড়োর বিচি, সূর্যমুখীর বিচি, মটরশুটি, শিমের বিচি ও ছোলা।
  • শস্য জাতীয়- গম, ওটস, ভাত, ব্রাউন রাইস, পাস্তা ইত্যাদি।

কার্বোহাইড্রেট এর উপকারিতা

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের অনেক পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। নিচে কার্বোহাইড্রেট এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
কার্বোহাইড্রেট এর উপকারিতা
প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয়- কার্বোহাইড্রেট এর প্রধান উদ্দেশ্যই হলো দেহকে কাজ করা ও সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করা। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার ভেঙ্গে গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং রক্তে মেশে। গ্লুকোজ কোষগুলোতে শক্তি প্রদান করে।

সঞ্চিত শক্তি হিসেবে দেহে অবস্থান করে- আমাদের দেহে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্লুকোজ এর প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্লুকোজ দেহ লিভার ও মাংসপেশীতে সঞ্চয় করে রাখে যেন পরবর্তীতে এটিকে ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করতে পারে। সঞ্চিত রুপে দেহে যে গ্লুকোজ থাকে তাকে গ্লাইকোজেন বলে।

হার্ট বা হৃদপিন্ড ভালো রাখতে- পর্যাপ্ত পরিমাণে জটিল শর্করা সমৃদ্ধ খাবার যেখানে ফাইবার ও স্টার্চ থাকে, এ ধরনের খাবার খেলে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

ডায়েবিটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে- জটিল শর্করা জাতীয় খাবার দীর্ঘক্ষণ সময় ধরে হজম হওয়ার কারণে এটি দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় না, যার ফলে যাদের ডায়েবিটিস বা ইনসুলিন জনিত রোগ রয়েছে তাদের রক্তে গ্লুকোজ এর সঠিক ভারসাম্য বজায় থাকে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইবার সমৃদ্ধ কার্বোহাইড্রেট টাইপ-২ ডায়েবিটিস ও খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে সাহায্য করে।

মাংসপেশীর ক্ষয় রোধ করে- মাংসপেশীতে সঞ্চিত হিসেবে যে গ্লাইকোজেন বা গ্লুকোজ থাকে, এটি মাংসপেশী ক্ষয় হওয়া রোধ করে। ব্যায়াম করার সময় এটি প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। এছাড়া দেহে কার্বোহাইড্রেট এর ঘাটতি দেখা দিলে তখনও এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

হজম বা পাচনতন্ত্রের উন্নতি করে- কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যে অত্যাবশ্যকীয় ডায়েটারি ফাইবার ও স্টার্চ থাকে যা হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়। এটি মল নরম করে নিয়মিত মলত্যাগ ও কোষ্ঠকাঠিণ্যর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি পেটজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি দূর করে ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে।

কার্বোহাইড্রেট এর উৎস

আমাদের খাদ্যতালিকায় যে সকল খাবার থাকে তার অধিকাংশ ই কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার। নিচে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:
কার্বোহাইড্রেট এর উৎস
শস্য জাতীয়- গমের রুটি ও পাউরুটি, সাদা ময়দা, ব্রাউন রাইচ, পাস্তা, নুডলস, ওটস ইত্যাদি।
ফলমূল- আপেল, কমলালেবু, আম, কলা, স্ট্রবেরি, তরমুজ।
ডাল- মসুর, মুগ ডাল।
দুধ দুগ্ধজাত খাবারে- যেমন: পনির।
মটরশুটি, ছোলা, শিমের বিচি।
মিষ্টি জাতীয় খাবারে- মিষ্টি, আইসক্রিম, চকলেট, কুকিজ, কেক, পেস্ট্রি ইত্যাদি।
পানীয়- কোমল পানীয়, সোডা, ফলের জুস।
শাকসবজি- উজ্জ্বল বা সবুজ রঙ এর শাকসবজি, ভুট্টা, মিষ্টি আলু ইত্যাদি।

কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে কি হয়

কার্বোহাইড্রেট আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। যেহেতু এটি দেহের প্রধান শক্তির উৎস, তাই দেহে এর ঘাটতি দেখা দিলে দূর্বলতা সহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। নিচে কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে কি হয় তা আলোচনা করা হলো:
মাথাব্যথা- কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লুকোজ উৎপাদন করা সম্ভব হয় না, যার ফলে মস্তিষ্কের স্নায়ু গুলো সঠিকভাবে তাদের কাজ করতে পারে না। ফলস্বরুপ মাথাব্যথার সমস্যা দেখা দেয়।

দূর্বলতা অনুভব করা- কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে ক্লান্তিভাব ও দেখা দেয়। শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়লে আমরা সঠিকভাবে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারিনা।

কোষ্ঠকাঠিন্য- কার্বোহাইড্রেটে অত্যাবশ্যকীয় ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে যা নিয়মিত মলত্যাগ ও কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর করে। তাই কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে হজম প্রক্রিয়া বা পাচন তন্ত্রের কার্যকারিতা কমে যায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

অস্বাস্থ্যকর হারে ওজন কমে যাওয়া- ওজন কমানোর জন্য সাধারণত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার কম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে খুব দ্রুত হারে ওজন কমতে থাকে যেটি আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই বিপজ্জনক।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যাওয়া- কার্বোহাইড্রেট মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্য সম্পাদনের জন্য অপরিহার্য। পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা গ্রহণ না করলে ব্রেইন ঠিকমতো তার কাজ করতে পারে না ও কাজে মনোনিবেশ করা কষ্টসাধ্য হয়।

কার্বোহাইড্রেট বেশি খেলে কি হয়

প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট খেলে আমাদের দেহে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কার্বোহাইড্রেট বেশি খেলে কি হয় তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
ওজন বৃদ্ধি হয়- কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খেলে দেহের ওজন বৃদ্ধি হয় ও স্থূলতা দেখা দেয়। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে এটি আমাদের রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে দেহের ওজন বৃদ্ধি হয়।
রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃ্দ্ধি করে- গবেষণায় দেখা গেছে, কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খেলে এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃ্দ্ধি পেলে এটি হৃদরোগ ও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে- কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশি খেলে এটি খুব দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পেলে টাইপ-২ ডায়েবিটিস রোগ হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে- কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার বেশি পরিমাণে খেলে পেটের হজম প্রক্রিয়ার কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হতে পারে না। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাপা সহ পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কতটুকু কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন

একজন মানুষের দৈনিক কতটুকু কার্বোহাইড্রেট এর প্রয়োজন হবে তা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন: শরীরের গঠন, বয়স, লিঙ্গ, কতটা পরিশ্রমী, তার ফিটনেস লক্ষ্য কি (ওজন বাড়াতে বা কমাতে চান), চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন কিনা ইত্যাদি। United State Department of Agriculture (USDA) এর ডায়েটারি গাইডলাইন অনুযায়ী আমাদের দৈনিক ক্যালরির প্রায় ৪৫-৬৫% খাবার কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার থেকে গ্রহণ করা উচিত। এক গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এ ৪ কিলো ক্যালরি থাকে।
Source: Medline Plus, Cleveland Clinic, Health line, Medical News Today.

লেখকের মন্তব্য

সুস্থ ও ফিট থাকার জন্য আমাদের অবশ্যই কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। জটিল শর্করা বা Complex Carbohydrate সমৃদ্ধ খাবারকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত যেগুলোতে ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল থাকবে। সরল শর্করা কম পরিমানে খাওয়াই বাঞ্ছনীয়।

প্রিয় পাঠক, আশা করছি আপনি কার্বোহাইড্রেট এর উৎস, কার্বোহাইড্রেট এর শ্রেণীবিভাগ, কার্বোহাইড্রেট এর উপকারিতা, কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে কি হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। যদি আপনার এই ধরনের বিশ্বস্ত ও তথ্যপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে ভালো লাগে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করতে পারেন।

কারণ আমরা এই ধরনের আর্টিকেল নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি। আপনার কোন পরামর্শ বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার প্রিয়জন ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url