৫ লাখ টাকার ব্যবসা বাংলাদেশে করে কিভাবে লাভবান হবেন
প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। ৫ লাখ টাকার ব্যবসা বাংলাদেশে করে কিভাবে লাভবান
হবেন তা নিয়ে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের এই আর্টিকেলে
আমরা আপনাদের বলব ৫ লাখ টাকার ব্যবসা বাংলাদেশে করে কিভাবে লাভবান হওয়া
সম্ভব।
সেই সঙ্গে ১ লাখ টাকায় ব্যবসা, ৩ লাখ টাকার ব্যবসা, ১০ লাখ টাকার ব্যবসা কিভাবে
করবেন এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে
পড়ার অনুরোধ করছি।
কনটেন্ট সূচিপত্র: ৫ লাখ টাকার ব্যবসা বাংলাদেশে করে কিভাবে লাভবান হবেন
ভূমিকা
বর্তমানে, ৫ লাখ টাকার ব্যবসা বাংলাদেশে করে অনেকেই আর্থিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার
উদ্যোগ নেন। কিন্তু ব্যবসা সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও পরিকল্পনা না থাকার কারণে আমরা
ব্যবসা করতে ভয় পাই এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকি। সেজন্য, আজকের এই আর্টিকেলে
আমরা বিভিন্ন তথ্য ও বিষয়কে কেন্দ্র করে স্বল্প পুজিঁতে, অর্থাৎ ৫ লাখ টাকার
ব্যবসা বাংলাদেশে করে কিভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যেতে পারে তা নিয়েই আলোচনা
করেছি।
তবে ৫ লাখ টাকার ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে
খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমত, আপনি যে ব্যবসা টি করার উদ্যোগ নিয়েছেন, তা সম্পর্কে
আপনার অবশ্যই একটি বেসিক ধারণা থাকতে হবে। এছাড়া আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ও
লক্ষ্য, বাজার প্রতিযোগীতা ও সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কেও অবগত থাকা অত্যন্ত জরুরী।
৫ লাখ টাকার ব্যবসা বাংলাদেশে
৫ লাখ টাকার ব্যবসা বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। তবে, আমি মনে করি ব্যবসা করার
জন্য ৫ লাখ টাকা পুজিঁ অনেক কম। তাই, ব্যবসা শুরু করার প্রথম পর্যায়ে আপনি চেষ্টা
করবেন, স্বল্প পরিমাণ পুজিঁ বিনিয়োগ করতে। এক্ষেত্রে আপনার আর্থিক ঝুঁকির আশঙ্কা
কম থাকবে।
তাহলে চলুন জেনে নিই ৫ লাখ টাকার ব্যবসা বাংলাদেশে কি কি রয়েছে যেগুলোতে ঝুঁকির
আশঙ্কা অনেক কম, কিন্তু আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি:
ফাস্ট ফুড ব্যবসা
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যবসা হলো- ফাস্ট
ফুড ব্যবসা। আমরা সকলেই বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করি। একটি
জরিপে দেখা গেছে, খুচরা খাবারের মধ্যে ফাস্টফুড জাতীয় খাবারে সবচেয়ে বেশি লাভ হয়।
কিন্তু শহরে এধরনের ফাস্ট ফুড জাতীয় দোকানের সংখ্যা ও প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তাই
গ্রামাঞ্চলে, যেখানে লোকজনের সমাগম বেশি এমন স্থানে ফাস্ট ফুডের দোকান দিলে সেটি
বেশি লাভজনক হবে।
পোশাক-পরিচ্ছদ ও কাপড়ের ব্যবসা
৫ লাখ টাকার ব্যবসা বাংলাদেশে করে সবচেয়ে
বেশি লাভবান হয়েছেন পোশাক পরিচ্ছদ ও কাপড়ের ব্যবসায়ীরা। কারণ বাংলাদেশের সবচেয়ে
বড় রপ্তানিমুখী শিল্পখাত হলো পোশাক শিল্প। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে কাপড়ের ব্যবসা
থেকে ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে তরুন প্রজন্মদের মধ্যেও
রেডিমেড পোশাকের চাহিদা অনেক বেশি।
আপনি যদি পাঞ্জাবী, শার্ট, থ্রি পিস, শাড়ীর ভালো কালেকশন তৈরি করতে পারেন, তাহলে
আপনাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না।
কসমেটিক ও মেকআপ সামগ্রীর ব্যবসা
মহিলাদের জন্য কসমেটিক সামগ্রী খুব
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক মহিলারা নিজেকে আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় দেখাতে
কসমেটিক ও মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করেন। বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক পণ্য, যেমন:
ফেসওয়াশ, সানস্ক্রিন, তেল, শ্যাম্পু, ক্রিম এন্ড লোশন, হেয়ার ড্রায়ার, মেকআপ,
জুয়েলারি এগুলোর চাহিদা সবসময় বেশি থাকে এবং এটি খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা।
স্টেশনারি পণ্যের ব্যবসা
আমার মতে, স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে সবচাইতে
লাভজনক ও নিরাপদ ব্যবসা হলো স্টেশনারি পণ্য বিক্রি করা। কিছু টিপস এন্ড ট্রিক্সস
অনুসরণ করে আপনি স্টেশনারি পণ্যের বিক্রির পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি করতে পারবেন। এ
ব্যবসা শুরু করার জন্য এমন স্থান নির্বাচিত করুন যেখানে লোকজনের সমাগম এবং
স্টেশনারি পণ্যের প্রয়োজনীয়তা বেশি রয়েছে।
যেমন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, অফিস- আদালত ইত্যাদি। তাহলে আপনি বেশি পরিমাণ
কাস্টমার পাবেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন। সাধারণত স্টেশনারি পণ্য গুলো
হলো: খাতা, কলম, পেন্সিল, স্কেল, নোটবুক, স্টেপলার মেশিন, ইত্যাদি।
কফি শপ
বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ চা ও কফি খেতে অভ্যস্ত।
তবুও চাহিদার তুলনায় দেশে কফি শপের সংখ্যা অনেক কম। কফি শহর ও গ্রাম উভয় স্থানেই
জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে। তাই কফি শপের দোকান বা ব্যবসা খুবই লাভজনক হিসেবে
বিবেচিত হয়।
১ লাখ টাকায় ব্যবসা- ৩ লাখ টাকার ব্যবসা
আপনার পুজিঁ যদি ১-৩ লাখ টাকা বা তার কিছু বেশি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রেও এমন কয়েকটি
ব্যবসা রয়েছে যেগুলো করার মাধ্যমে আপনি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন। চলুন জেনে
নেওয়া যাক, ১ লাখ টাকায় কোন ধরনের ব্যবসা করা সম্ভব:
মুদির দোকান
Grocery item বা মুদি জিনিসপত্র আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বা গ্রামীণ
এলাকায় মুদি দোকানের চাহিদা অনেক বেশি। মুদি দোকানে আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সকল
জিনিসপত্র থাকে। যেমন: চাল, ডাল, লবণ, চিনি, তেল, সাবান, টুথপেস্ট, ডিটারজেন্ট
পাউডার, মাউথওয়াশ ইত্যাদি। সুতরাং আপনি মুদির দোকানের ব্যাবসা করে লাভবান হতে
পারবেন।
পোল্ট্রি খামার
আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে আরেকটি জনপ্রিয় ব্যবসা হলো
মুরগি প্রতিপালন বা পোল্ট্রি ফার্মিং। অনেকের ধারণা, মুরগির খামার তৈরি করতে অনেক
টাকার প্রয়োজন হবে। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন, মাত্র ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ করে
মুরগি প্রতিপালনের ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
খুবই অল্প জায়গাতেই মুরগির খামার করা যায় এবং বাম্পার লাভের সম্ভাবনা থাকে। আপনি
যদি ভালো জাতের মুরগি নির্বাচন করেন, তাহলে ডিম ও মাংস দুটোই বিক্রি করে টাকা
রোজগার করতে পারবেন।
গরুর খামার
আপনি যদি স্বল্প টাকা বিনিয়োগ করে একজন সফল ব্যবসায়ী বা
উদ্যোক্তা হতে চান, তাহলে বাড়িতে গরু পালন করা শুরু করতে পারেন। এটি
গ্রামাঞ্চলের অত্যন্ত লাভজনক ও জনপ্রিয় একটি ব্যবসা। আমাদের দেশে গরুর চাহিদা
সবসময় বেশি থাকে। গরু পালন করার মাধ্যমে আপনি বিভিন্নভাবে ব্যবসা করতে পারবেন।
আপনি যদি এক লক্ষ টাকা খরচ করে দুইটি উন্নত জাতের গরু কিনেন এবং ভালোভাবে পালন
করে বাজারে বিক্রি করেন, তাহলে আপনি লাভবান হবেন। এছাড়াও গরুর দুধ, গোবর ও
বায়োগ্যাস বিক্রি করেও কিছু টাকা আয় করতে পারবেন।
উপরে উল্লিখিত ব্যবসাগুলো ছাড়াও ৩ লক্ষ টাকার আরো কিছু ব্যবসা গুলো দেওয়া হলো:
- মোবাইল ব্যাংকিং। যেমন: বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় ইত্যাদি।
- সেলুনের দোকান।
- মোবাইল সাভিসিং ও রিপেয়ারিং।
- ফটোকপি ও প্রিন্টিং ব্যবসা।
১০ লাখ টাকার ব্যবসা- ১৫ লাখ টাকায় ব্যবসা
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমরা ৫ লাখ টাকার ব্যবসা বাংলাদেশে, ১ লাখ টাকার ব্যবসা, ৩
লাখ টাকার ব্যবসা কিভাবে করা যায় তা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এখন ১০-১৫ লক্ষ টাকার
ব্যবসা গুলো সম্পর্কে আলোচনা করব।
মৎস চাষ করা
বর্তমানে বাংলাদেশে অসংখ্য ব্যক্তি মাছ চাষ করে
বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন জেলায় মাছ চাষ করে ব্যবসায়ীরা মাসে লক্ষ
লক্ষ টাকা আয় করছেন। তবে, মৎস চাষ করা একটু কষ্টসাধ্য কাজ এবং এ ব্যবসায় মাঝে
মাঝে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাছ চাষ করার জন্য আপনাকে পুকুরের সঠিক অবস্থান,
উচ্চমাণের মাছের পোণা ও পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
মোবাইল ফোনের ব্যবসা
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন
ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। আপনি যদি ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে
মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রিক সামগ্রীর একটি দোকান প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন,
তাহলে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
আপনি আপনার মোবাইল ফোনের ব্যবসা টি অনলাইন প্লাটফর্ম, যেমন: ফেসবুকে প্রচার
প্রচারণা চালিয়ে অনেক মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারবেন। এছাড়াও মোবাইল ফোনের সাথে
সম্পর্কিত অন্যান্য এক্সেসরিজ, যেমন: ব্যাক কভার, এয়ারফোন, চার্জার, স্মার্ট ওয়াচ
বিক্রি করতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আশা করছি আপনি ৫ লাখ টাকার ব্যবসা বাংলাদেশে, ১ লাখ টাকায় ব্যবসা, ৩
লাখ টাকার ব্যবসা, ১০ লাখ টাকার ব্যবসা, ১০ লাখ টাকার ব্যবসা এ সমস্ত বিষয়গুলো
সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। যদি আপনার এই ধরনের বিশ্বস্ত ও
তথ্যপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে ভালো লাগে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করতে পারেন।
কারণ আমরা এই ধরনের আর্টিকেল নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি। আপনার কোন পরামর্শ বা
মন্তব্য থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে
থাকেন, তাহলে আপনার প্রিয়জন ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে
আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url