ভিটামিন কে এর অভাবে কোন রোগ হয় যা অনেকেই জানেনা

প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আপনি কি ভিটামিন কে এর অভাবে কোন রোগ হয় এ সম্পর্কে জানেন? যদি না জেনে থাকেন ও জানতে আগ্রহী হন, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা ভিটামিন কে এর অভাবে কোন রোগ হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।
ভিটামিন কে এর অভাবে কোন রোগ হয়
এছাড়াও ভিটামিন k এর উৎস, ভিটামিন কে এর কাজ, ভিটামিন কে এর অভাবজনিত লক্ষণ সম্পর্কেও আলোচনা করবো।

কনটেন্ট সূচিপত্র: ভিটামিন কে এর অভাবে কোন রোগ হয় জেনে নিন

ভূমিকা

ভিটামিন কে হলো একধরনের Fat- soluble ভিটামিন। Fat-soluble ভিটামিন গুলো: (ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে) ফ্যাট বা তেলে দ্রবীভূত হয়ে বা ভেঙ্গে দেহে শোষিত হয় বা কাজে লাগে। অতিরিক্ত ভিটামিন কে লিভার ও টিস্যুগুলোতে সঞ্চিত অবস্থায় থাকে এবং পরবর্তীতে দেহের কাজে লাগে। ভিটামিন কে এর দুটি গ্রুপ বা শ্রেণী রয়েছে। এগুলো হলো: ভিটামিন কে- ১ বা phylloquinone এবং ভিটামিন কে- ২ বা menaquinone.

ভিটামিন কে দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি পুষ্টি উপাদান। ভিটামিন কে ক্ষতস্থান নিরাময় করতে, হাড় মজবুত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ভিটামিন কে রক্তে ক্যালসিয়াম এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। দেহ ভিটামিন কে নিজে থেকে তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। তাই ভিটামিন কে এর অভাব পূরণ করতে ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার ও সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।

ভিটামিন কে এর কাজ

ভিটামিন কে দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। ভিটামিন কে এর প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। ভিটামিন কে এর কাজ ও উপকারিতা দেওয়া হলো:

রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে- ভিটামিন কে দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ৪ টি প্রোটিন তৈরি করে যার কারণে রক্ত সহজে জমাট বাঁধে। এটি যেকোন ধরনের ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ার প্রবণতা কমায় এবং ক্ষতস্থান দ্রুত নিরাময় করে। এছাড়াও ভিটামিন কে রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতেও সহায়তা করে।
হাড় মজবুত করে- ভিটামিন কে হাড়ে osteocalcin নামক প্রোটিন তৈরি করে যা হাড় মজবুত করতে ও হাড়ে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ভিটামিন কে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং অস্টিওপোরোসিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

হার্ট ভালো রাখে- ভিটামিন কে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। গবেষকরা দেখেছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন কে গ্রহণ করলে এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে। এছাড়া এর ফলে হৃদপিন্ড সঠিকভাবে দেহে রক্ত পরিবহণ করতে পারে।

ভিটামিন k এর উৎস। ভিটামিন কে জাতীয় ফল

ভিটামিন কে এর উদ্ভিজ্জ উৎস, যেমন- শাকসবজিতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। ভিটামিন k এর উৎস গুলো হলো:
ভিটামিন k এর উৎস। ভিটামিন কে জাতীয় ফল
  • ডিম।
  • মাংস।
  • ডুমুর ফল।
  • আঙ্গুর।
  • ব্লুবেরি।
  • গাজর।
  • জলপাই।
  • বেদেনা।
  • ফুলকপি।
  • পাতাকপি।
  • পালং শাক।
  • ব্রকলি।
  • লেটুস পাতা।
  • উদ্ভিজ্জ তেল। যেমন: অলিভ তেল, সয়াবিন তেল ও ক্যানোলা তেল।

ভিটামিন কে এর অভাবজনিত লক্ষণ

নবজাতক শিশু ও যে সকল শিশুরা মায়ের বুক দুধ পান করে তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন কে এর অভাবজনিত লক্ষণ দেখা দেয়। এই কারণে ডাক্তাররা শিশুর জন্মগ্রহণের পর ভিটামিন কে ইনজেকশন দিয়ে থাকেন। ভিটামিন কে এর অভাবজনিত লক্ষণ হলো:
  • hemorrhage বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় যেটি শিশুদের জন্য প্রাণঘাতি হতে পারে।
  • সামান্য আঘাতেই ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া।
  • নাক দিয়ে রক্ত পড়া।
  • পায়খানার রং অতিরিক্ত পরিমাণে কালো হওয়া।
  • হাতের নখে রক্ত জমাট বেঁধে থাকা।
  • প্রসাব, পায়খানা ও বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।

ভিটামিন কে এর অভাবে কোন রোগ হয়

ভিটামিন কে এর অভাবে কোন রোগ হয় এই প্রশ্নটি অনেকেই করে থাকেন। ভিটামিন কে এর অভাবে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা বা hemorrhagic disease হয়। এছাড়াও ভিটামিন কে এর অভাবে অস্টিওপোরোসিস রোগ হয়। অস্টিওপোরোসিস রোগ হলো একধরনের হাড়ের ব্যাধি যার ফলে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়।
ভিটামিন কে এর অভাবজনিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে ডাক্তার prothrombin time (PT) test করে থাকেন। এটি হলো একটি রক্ত পরীক্ষা যার মাধ্যমে পরিমাপ করা যায় রক্ত জমাট বাঁধতে কতক্ষণ সময় লাগে। রক্ত জমাট বাঁধতে সাধারণত ১১ থেকে ১৩.৫ সেকেন্ড সময় লাগে। এর চেয়ে বেশি সময় লাগলে তার দেহে ভিটামিন কে এর ঘাটতি রয়েছে। ভিটামিন কে এর অভাব দেখা দিলে ডাক্তাররা ভিটামিন কে ইনজেকশন বা ঔষধ প্রয়োগ করেন।
Source: Healthline, Medical News Today.

লেখকের মন্তব্য

ভিটামিন কে নবজাতক শিশুর শারীরিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। আমাদের ডায়েট বা খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার যুক্ত করা উচিত। কার্ডিওভাসকুলার ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও ভিটামিন কে এর ভূমিকা অপরিসীম। পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ শাকসবজি জাতীয় খাবার খেলে সহজেই ভিামিন কে এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

প্রিয় পাঠক, আশা করছি আপনি ভিটামিন কে এর কাজ, ভিটামিন k এর উৎস, ভিটামিন কে জাতীয় ফল, ভিটামিন কে এর অভাবজনিত লক্ষণ, ভিটামিন কে এর অভাবে কোন রোগ হয় এ সমস্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। যদি আপনার এই ধরনের বিশ্বস্ত ও তথ্যপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে ভালো লাগে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করতে পারেন।

কারণ আমরা এই ধরনের আর্টিকেল নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি। আপনার কোন পরামর্শ বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার প্রিয়জন ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url